শুক্রবার ৬ জুন ২০২৫ - ১৯:২৫
সভ্যতাগত জিহাদের মূল স্তম্ভ ও জাতীয় ক্ষমতার রহস্য

সভ্যতাগত জিহাদ হলো একটি সর্বাত্মক, উদ্দেশ্যনির্ভর ও পরিচালিত আন্দোলন যা কাঠামোগত দুর্বলতা অতিক্রম, শত্রুর ষড়যন্ত্র থামানো এবং নতুন ইসলামি সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আব্বাস কাবি জোর দিয়ে বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহ (ধর্মীয় নেতৃত্বের অধীনতা) ছাড়া সভ্যতাগত জিহাদ (جهاد تمدنی) সম্ভব নয়। ইসলামি বিপ্লবের ভাবধারায় এটি কৌশলগত দিকনির্দেশনার কাজ করে, যা হুমকিকে সুযোগে এবং দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে।

সভ্যতাগত জিহাদ ও বিলায়াত-এ-ফকিহ

একটি জাতীয় কনফারেন্সে তিনি বলেন, সভ্যতাগত জিহাদ হলো একটি সর্বাত্মক, উদ্দেশ্যনির্ভর ও পরিচালিত আন্দোলন যা কাঠামোগত দুর্বলতা অতিক্রম, শত্রুর ষড়যন্ত্র থামানো এবং নতুন ইসলামি সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তিনি স্পষ্ট করেন, এই পথ বিলায়াত-এ-ফকিহ ছাড়া শুরু থেকেই ব্যর্থ হবে।

ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল স্তম্ভ

আয়াতুল্লাহ কাবি বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহ হলো ইসলামী ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ এবং শত্রুর সাংস্কৃতিক আধিপত্য রুখে দেওয়ার প্রধান বাধা। তাই শত্রুর অন্যতম লক্ষ্য হলো এই ধর্মীয় নেতৃত্বকে দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক পরিচয়হীনতা ছড়িয়ে দেওয়া।

জনসম্পৃক্ততা ও নেতৃত্ব

তিনি বলেন, বিশ্বাসী ও বিপ্লবী জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সবাইকে সক্রিয়ভাবে জিহাদের ময়দানে নামতে হবে এবং হুমকিকে সুযোগ ও দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তবে, এই রূপান্তরের নেতৃত্ব বিলায়াত-এ-ফকিহ ছাড়া সম্ভব নয়।

ইমাম খোমেনির দুই ভিত্তি: বিলায়াত-এ-ফকিহ ও জাতীয় স্বাধীনতা

তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ইমাম খোমেনির যুক্তি দুই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: ১) বিলায়াত-এ-ফকিহ এবং ২) জাতীয় স্বাধীনতা। এই দুইটি ইসলামী শাসনব্যবস্থার ভিত্তি এবং স্থানীয় উন্নয়ন মডেলের মূল উপাদান।

ইসলামি ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতি গঠন

তিনি বলেন, সভ্যতাগত জিহাদ কেবল প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিরক্ষা নয়, বরং সরকারব্যবস্থাকে ইসলামী ভিত্তিতে পুনর্গঠনের এক প্রচেষ্টা। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ইসলামি ভাবনায় গঠিত হওয়া দরকার।

প্রতিরোধ অর্থনীতি: কার্যকর হাতিয়ার

তিনি প্রচলিত পুঁজিবাদী ও রাষ্ট্রনির্ভর অর্থনীতির সমালোচনা করে বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অর্থনৈতিক মডেল হলো “প্রতিরোধ অর্থনীতি”। এতে জনগণের অংশগ্রহণ, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার বিচ্ছেদ, এবং দুর্নীতি ও একচেটিয়াবাদ রোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

হিজাব রক্ষা: সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ময়দান

তিনি বলেন, হিজাব ও পবিত্রতা রক্ষার প্রশ্নে কেবল আইনগত বা আবেগপ্রবণ পদক্ষেপ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক-যুক্তিসংগত আন্দোলন দরকার। হিজাব রক্ষা হলো ইসলামি-ইরানি পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা

আয়াতুল্লাহ কাবি বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহের একটি মৌলিক ভূমিকা হলো আমেরিকার আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা এবং ঈমান, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করা। ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব এই অন্যায় বিশ্বব্যবস্থার মাঝে এক নতুন প্রতিরোধের দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

উপসংহার

তিনি বলেন, জাতীয় স্বাধীনতা ও বিলায়াত-এ-ফকিহ হলো ইসলামি সভ্যতার দু’টি অপরিবর্তনীয় ডানা। এই দুইটির সমর্থন ছাড়া কোনও অগ্রগতি সম্ভব নয়। ইসলামি সভ্যতা গড়তে চাইলে, বিলায়াত-এ-ফকিহকে কেন্দ্র করে সভ্যতাগত জিহাদকে শাসন ও প্রতিরোধের মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha