হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞ পরিষদের সদস্য আয়াতুল্লাহ আব্বাস কাবি জোর দিয়ে বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহ (ধর্মীয় নেতৃত্বের অধীনতা) ছাড়া সভ্যতাগত জিহাদ (جهاد تمدنی) সম্ভব নয়। ইসলামি বিপ্লবের ভাবধারায় এটি কৌশলগত দিকনির্দেশনার কাজ করে, যা হুমকিকে সুযোগে এবং দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
সভ্যতাগত জিহাদ ও বিলায়াত-এ-ফকিহ
একটি জাতীয় কনফারেন্সে তিনি বলেন, সভ্যতাগত জিহাদ হলো একটি সর্বাত্মক, উদ্দেশ্যনির্ভর ও পরিচালিত আন্দোলন যা কাঠামোগত দুর্বলতা অতিক্রম, শত্রুর ষড়যন্ত্র থামানো এবং নতুন ইসলামি সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। তিনি স্পষ্ট করেন, এই পথ বিলায়াত-এ-ফকিহ ছাড়া শুরু থেকেই ব্যর্থ হবে।
ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূল স্তম্ভ
আয়াতুল্লাহ কাবি বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহ হলো ইসলামী ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ এবং শত্রুর সাংস্কৃতিক আধিপত্য রুখে দেওয়ার প্রধান বাধা। তাই শত্রুর অন্যতম লক্ষ্য হলো এই ধর্মীয় নেতৃত্বকে দুর্বল করা এবং রাজনৈতিক পরিচয়হীনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
জনসম্পৃক্ততা ও নেতৃত্ব
তিনি বলেন, বিশ্বাসী ও বিপ্লবী জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সবাইকে সক্রিয়ভাবে জিহাদের ময়দানে নামতে হবে এবং হুমকিকে সুযোগ ও দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। তবে, এই রূপান্তরের নেতৃত্ব বিলায়াত-এ-ফকিহ ছাড়া সম্ভব নয়।
ইমাম খোমেনির দুই ভিত্তি: বিলায়াত-এ-ফকিহ ও জাতীয় স্বাধীনতা
তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ইমাম খোমেনির যুক্তি দুই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: ১) বিলায়াত-এ-ফকিহ এবং ২) জাতীয় স্বাধীনতা। এই দুইটি ইসলামী শাসনব্যবস্থার ভিত্তি এবং স্থানীয় উন্নয়ন মডেলের মূল উপাদান।
ইসলামি ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতি গঠন
তিনি বলেন, সভ্যতাগত জিহাদ কেবল প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিরক্ষা নয়, বরং সরকারব্যবস্থাকে ইসলামী ভিত্তিতে পুনর্গঠনের এক প্রচেষ্টা। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো ইসলামি ভাবনায় গঠিত হওয়া দরকার।
প্রতিরোধ অর্থনীতি: কার্যকর হাতিয়ার
তিনি প্রচলিত পুঁজিবাদী ও রাষ্ট্রনির্ভর অর্থনীতির সমালোচনা করে বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অর্থনৈতিক মডেল হলো “প্রতিরোধ অর্থনীতি”। এতে জনগণের অংশগ্রহণ, মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার বিচ্ছেদ, এবং দুর্নীতি ও একচেটিয়াবাদ রোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
হিজাব রক্ষা: সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ময়দান
তিনি বলেন, হিজাব ও পবিত্রতা রক্ষার প্রশ্নে কেবল আইনগত বা আবেগপ্রবণ পদক্ষেপ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক-যুক্তিসংগত আন্দোলন দরকার। হিজাব রক্ষা হলো ইসলামি-ইরানি পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা
আয়াতুল্লাহ কাবি বলেন, বিলায়াত-এ-ফকিহের একটি মৌলিক ভূমিকা হলো আমেরিকার আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা এবং ঈমান, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি করা। ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব এই অন্যায় বিশ্বব্যবস্থার মাঝে এক নতুন প্রতিরোধের দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
উপসংহার
তিনি বলেন, জাতীয় স্বাধীনতা ও বিলায়াত-এ-ফকিহ হলো ইসলামি সভ্যতার দু’টি অপরিবর্তনীয় ডানা। এই দুইটির সমর্থন ছাড়া কোনও অগ্রগতি সম্ভব নয়। ইসলামি সভ্যতা গড়তে চাইলে, বিলায়াত-এ-ফকিহকে কেন্দ্র করে সভ্যতাগত জিহাদকে শাসন ও প্রতিরোধের মূল কৌশল হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
আপনার কমেন্ট